আজকের দুনিয়া কত সুন্দর! কত চাকচিক্যময় এই পৃথিবী! চোখ ধাঁধানো বিশ্বে সব কিছু নতুন নতুন সাজে সজ্জিত হচ্ছে। এই জৌলুস ও নতুনত্বে আমরাও ডুবে যাচ্ছি। গা ভাসিয়ে দিচ্ছি গতানুগতিক জীবন প্রবাহে। অথচ রাসূল সা: সব সময় চাকচিক্যময় জীবন যাপন ও ভোগবিলাস ত্যাগ করতে বলেছেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: হতে বর্ণিত রয়েছে, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, আমি আমার অবর্তমানে তোমাদের জন্য যে ব্যাপারে সর্বাধিক ভয় করি তা হলো পার্থিব জৌলুস এবং তার সৌন্দর্য, যা তোমাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কল্যাণ কি কখনো মন্দের কারণ হতে পারে? তখন তিনি কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা মনে করলাম যে, রাসূল সা:-এর ওপর অহি নাজিল হচ্ছে। তারপর তিনি শরীরের ঘাম মুছে ফেলে বললেন, সে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? বর্ণনাকারী বলেন, মনে হলো যেন তিনি প্রশ্নকারীর কথাটি প্রশংসনীয় বলে মনে করছেন। অতঃপর রাসূল সা: বললেন, কল্যাণ কখনো মন্দকে আহ্বান করে না। যেমন বসন্ত মওসুম যা উৎপাদন করে তা মূলত ধ্বংস করে না বা ধ্বংসের কাছেও নিয়ে যায় না; কিন্তু তৃণভোজী জীব যখন অধিক মাত্রায় আহার করে, তারপর যখন কোমরের উভয় পাশ ফুলে উঠে তখন রৌদ্রে গিয়ে দাঁড়ায় এবং মলমূত্র ত্যাগ করে। তারপর আবার তৃণভূমির দিকে ফিরে যেতে থাকে। বস্তুত দুনিয়ার মালদৌলত শ্যামল সবুজ ও উপাদেয় বটে। যে তা বৈধভাবে উপার্জন করে এবং বৈধ পথে খরচ করে, তখন তা তার জন্য উত্তম উপকারী ও সাহায্যকারী; কিন্তু যে তা অবৈধ পথে উপার্জন করে তখন তার উদাহরণ যে জন্তুর মতো, যে ভক্ষণ করে কিন্তু তৃপ্তি লাভ করে না। আর তা কিয়ামত দিবসে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হবে। (বুখারি ও মুসলিম )।
হজরত আবু উমামা রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আমার প্রতিপালক মক্কার বাতহা উপত্যকা আমার জন্য স্বর্গে পরিণত করে দিয়ার বিষয় আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতে আমি বলেছি যে, না। হে আমার প্রতিপালক! আমি একদিন পরিতৃপ্ত এবং অপরদিন অভুক্ত থাকাই পছন্দ করি। কেননা যখন আমি অভুক্ত থাকব, তখন তোমার নিকট সকাতরে আমার বিনয় প্রকাশ করব এবং তোমাকে অধিক স্মরণ করব। আর যেদিন আমি পরিতৃপ্ত থাকব, সেদিন আমি তোমার প্রশংসা করব এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব (আহমদ, তিরমিজি)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: হতে বর্ণিত রয়েছে, একবার রাসূল সা: এক ব্যক্তিকে ঢেঁকুর দিতে শুনে বললেন, ঢেঁকুর কম দাও। কেননা কিয়ামত দিবসে সে ব্যক্তিই অধিক ক্ষুধার্ত হবে, যে দুনিয়ায় অধিক পরিতৃপ্ত হয়েছে (শরহে সুন্নাহ)। হজরত কা’ব রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোনো একটি ফেতনা (অর্থাৎ ঝামেলা) রয়েছে। আমার উম্মতের ফেতনা হলো, ধন-সম্পদ (তিরমিযি)। হজরত মেকদাম ইবনে মা’দিকারাব রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, কোনো ব্যক্তি তার পেটের তুলনায় খারাপ কোনো পাত্রকে ভর্তি করেনি। মানুষের জন্য এ পরিমাণ কয়েকটি গ্রাসই যথেষ্ট, যদ্বারা সে তার কোমরকে সোজা করতে পারে (এবং আল্লাহর ইবাদত করতে পারে।) এর বেশি খাওয়া প্রয়োজন মনে করলে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য, আর এক-তৃতীয়াংশ পানীয় এবং বাকি তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। হজরত কা’ব ইবনে মালেক তার পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, দু’টি ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্রকে বকরি ও মেষের পালের মধ্যে ছেড়ে দিলে ততটা ক্ষতিসাধন করে না, যতটা কোনো ব্যক্তির ধন-সম্পদের মোহ ও মর্যাদার লোভ তার ধর্মের ক্ষতি করে (তিরমিজি, দারেমি)।